অনিকেত নাক ডেকে ঘুমিয়ে কাদা দেখে গভীর রাতে পা টিপে টিপে বিছানা থেকে নামল কণিকা; নিয়ে এলো যুদ্ধের অস্ত্র- রেজার । তারপর শুরু হল নিশি যুদ্ধ । এক নিশ্বাসে খুব সাবধানে উড়িয়ে দিল অনিকেতের সাধের গোঁফ । অনিকেত টের পায়নি দেখে মনে মনে বেশ একখানা দক্ষতার হাসি হাসল কণিকা । যেন কোন এক রাজ্য জয় করে ফেলেছে ।
নিজেকে বাহবা দিয়ে আস্তে আস্তে বলল..
–হুঁ হু, এইবার দ্যাখো বাছা কত ধানে কত চাল । এতদিনে একটা কাজের মত কাজ করলাম । পাঁচ বছর ধরে পইপই করে বলে চলেছি ওই ঝাড়ুদারের গোঁফ কাটো..তা কে শোনে কার কথা । জীবনে ওই একটা জিনিসই আমার চরম অপছন্দ আর সেটাই কিনা বিয়ের পর থেকে এসে জুটেছে কপালে । ইসস্ কি লজ্জা কি লজ্জা….লোকসমাজে মুখ থাকে না ওই গোঁফের চক্করে পড়ে । লোকের সামনে কতবার যে খেতে গিয়ে সারা গোঁফে লস্যির স্বর, অথবা ভাতের দানা, কিম্বা তরকারির ঝোল আরো কত কি না আটকে লেগে থেকেছে তা অগুনতি আর বারবার আমি পড়েছি লজ্জায় । ছিঃ ছিঃ
ভাবলেও লজ্জা হয় । আর শুধু কি লোকের সামনে, চার দেওয়ালের মধ্যেও কম বিরক্তিতে ফেলেছে আমাকে তোমার ওই হতচ্ছাড়া গোঁফখানা । যতবার একটু রোমান্স করতে যাই ওমনি ঠিক চুমু খাওয়ার সময় তোমার গোঁফে সুড়সুড়ি খেয়ে আমার হাঁচি বেরিয়ে আসে । একেই আমি অ্যালার্জির রুগী…তাই তোমার গোঁফের আদুরে খোঁচা খেয়ে পরদিনই চাকা চাকা অ্যালার্জি দেখা দেয় আমার গোটা গালে । তোমার নাকের নিচে এক গোছা অমন খোঁচা মার্কা গোঁফ আমার জীবনটাই অতিষ্ট করে তুলেছিল…তাই আজ দিলাম উড়িয়ে ।
একটু থেমে আবার গজগজ করে কণিকা-
–ব্যাটা বলে কিনা গোঁফ নাকি পুরুষত্বের চিন্হ । হুহ…নিকুচি করেছে অমন পুরুষত্বের । দেখি কাল থেকে কিকরে ওই গোঁফ নিয়ে তুমি অহংকার করো । যাক বাবা এইবার অন্তত ভালবেসে চুমু টুকু খেতে পারব ।
অনিকেতের চুল ধরে আলতো ঝাঁকিয়ে দিয়ে আদর করে দেয় কণিকা । কি যে ভালো লাগছে ওর । আর ভালো লাগার চোটে ঘুমই আসছে না । বারবার দেখছে অনিকেতের গোঁফহীন মুখটা ।
–বাহ্ দ্যাখো তো কি সুন্দর টম ক্রুজ লাগছে তোমাকে ।
ঘুমন্ত বরের কানের কাছে ফিসফিস করে কণিকা ।
কখন যে আল্হাদে ঘুমিয়ে পড়ে তা বুঝতেও পারেনি ও ।
——————————————————————————————
পরদিন সকালে :
ঘুম থেকে উঠেই একবার ভালো করে দেখে নেয় অনিকেতের ক্লিন মুখখানা । মুচকি হেসে এবার একপ্রস্থ নাটক করতে হবে বলে তৈরি হয়ে নেয় কণিকা ।
শশুর শাশুড়ি দেওর কে চা দিয়ে দু কাপ চা নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকেই চিত্কার করে অনিকেতের ঘুম ভাঙ্গায় ও ।
–কি সর্বনাশ…কি সর্বনাশ… তোমার অমন সাধের গোঁফ কে চুরি করল গো ? কে তোমাকে সকাল সকাল এপ্রিল ফুল বানালো ? দেখ দেখ দাঁড়কাঁক বুঝি নিয়ে গেল তোমার গোঁফ…..
বৌ এর চিত্কারে ধড়ফড় করে উঠে বসে অনিকেত । হাঁ করে তাকিয়ে থাকে কণিকার দিকে । কণিকা এক দৌড়ে মোবাইল হাতে তুলে ক্যামেরা অন করে অনিকেতের মুখের সামনে ধরে ।
–ওহ্ আজ পয়লা এপ্রিল তাইনা । তা বেশ ভালই হয়েছে…তোমার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে এতদিনে…..
অদ্ভুতভাবে ওকে অবাক করে অনিকেত মুচকি মুচকি হাসতে থাকে ।
–তাই বলে এইভাবে সকাল সকাল…. তোমাকে এপ্রিল ফুল বানাবে । আমি এখুনি নিচে গিয়ে হুলুস্থুল বাঁধাচ্ছি । বাড়িতে কার এত বড় সাহস যে তোমার অমন সাধের গোঁফ উড়ালো;
হাসি চেপে রাগের ভান করে কণিকা ।
বৌকে এক ঝটকায় কাছে টেনে নেয় অনিকেত । তারপর আলতো চুমু দিয়ে বলে…
–হ্যাপি এপ্রিল ফুল ডে কণি……
দ্যাখো এবার আর খোঁচা খেয়ে অ্যালার্জি হবে না তোমার । তবে এ কাজ যে বাড়ির অন্য কোন মানুষের নয় বরং আমার অতি প্রিয় এক ধেড়ে দাঁড়কাকের তা আমি ভালই জানি ।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় কণিকা….
–মানে….মানে তু…তুমি টের পেয়েছিলে রাতে?
–হাতের কাজ বড়ই নিখুঁত তোমার……
হিহ্ হিহ্ হিহ্….আমি বুঝি এতই বোকা ।
–তাহলে রাতে উঠলে না কেন আর আমাকে বাধাই বা দিলে না কেন ??
–আরে কদিন ধরেই তোমার জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে ভাবছিলাম এবার গোঁফটা কেটেই ফেলব । কাল রাতে তুমি যখন গোঁফ কাটতে এলে, ভাবলাম যাক আমার খাটনি কমে গেল……. আর তোমাকে আজ এপ্রিল ফুল করার এত ভালো সুযোগটা ছাড়তে পারলাম না ।
এপ্রিল ফুউউউউউল কণি…….
হি হি হি ।।
–সমাপ্ত–
কলমে – রাজন্যা
Article Comments