সকালে ঘুম থেকে উঠে বউয়ের মুখ দেখে বুঝলাম সাংঘাতিক কিছু হয়েছে।
বললাম, “কী হয়েছে?”
ব্যাপক থমথমে মুখ। বলল, “একটা ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছি। একদম ভোরবেলায়।”
স্বপ্ন! তাই বলো! ভাবলাম কী না কী হয়েছে!
বললাম, “কিসের স্বপ্ন দেখলে, আরশোলা না মাকড়সার?”
বউ চোখ পাকিয়ে বলল, “বললাম তো ভয়ংকর স্বপ্ন! খুব ভয়ংকর! দেখলাম বাবার আবার বিয়ে হচ্ছে!”
আমি বললাম, “ওহ্ এই ব্যাপার। কী দেখলে? বিয়েতে আমরা নিমন্ত্রিত? নিমন্ত্রিত তো নিশ্চই নইলে বিয়ে হচ্ছে দেখবে কী করে?”
বউ আগুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি ইয়ার্কি করছ? ছিঃ!”
তারপর একটু থেমে বলল, “ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। আর শুধু স্বপ্ন দেখেছি বলে বলছি না, লাস্ট কিছুদিন বাবার আচরণ খুব সন্দেহজনক। প্রতিদিন সন্ধেবেলায় দু-তিন ঘন্টা বাইরে কোথায় কাটিয়ে আসে। কোথায় যায় মাকেও কিছু বলেনি। আমিও জিগ্যেস করেছিলাম, হেসে উড়িয়ে দিল।”
আমি বললাম, “ধুস্ যতসব ফালতু চিন্তা! তোমার বাবাকে কে বিয়ে করবে? ওই বুড়োকে?”
বউ বলল, “করবে করবে। শোনো একটা কাজ করবে? বাবা উল্টা-পুল্টা কিছু করছে নাকি জানার চেষ্টা করবে? করো না প্লিজ।”
বলতে বলতে বউয়ের গলা ভেঙে গেল।
আমি অভয় দিয়ে বললাম, “ঠিক আছে আমি এই রহস্যের সমাধান করব। আমি কায়দা করে তোমার বাবার পেট থেকে সত্যিটা টেনে বের করব।”
ভজহরিদার ফোনটা নিয়ে শ্বশুরমশাইকে ফোন করলাম।
তারপর গলাটা যথাসম্ভব বিকৃত করে ডিরেক্ট কাজের কথায় চলে গেলাম, “হ্যালো! শুনুন আপনার সব গোপন কাজকম্মো আমি জানি। প্রতিদিন সন্ধে হলেই আপনি কোথায় যান, কী করেন, সব! এবার সবার কাছে ফাঁস করে দেব। আর যদি সেটা না চান…”
শ্বশুরমশাই অতীব স্বাভাবিক গলায় আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “আপনি কে বলছেন জানি না তবে আর গোপন কিছু থাকবে না। আপনাকে বলতে হবে না, আমিই সবাইকে বলে দেব।”
শ্বশুরমশাইয়ের উত্তর শুনে আমার মাথা বনবন করে ঘুরে গেল। বলে কী! উনিই সব বলবেন! তাহলে বউয়ের কথাটাই সত্যি! এ তো কেলেঙ্কারিয়াস কাণ্ড! ঢিঢিক্কার কেস!
আমি ঘরে গিয়ে বউকে সব বললাম। ঘরে শোকের ছায়া নেমে এল।
বউ এমনই ভেঙে পড়ল যে আর রান্না করতে পারল না। আমি সুইগি থেকে ফ্রায়েড রাইস আর চিকেন কষা আনিয়ে বিরসবদনে গলাধঃকরণ করলাম। বউ একরকম না খেয়েই থাকল।
পরদিন সকালেই আসামি মানে শ্বশুরমশাই হাজির।
আজ রবিবার। কাল রাতে বউ একটুও ঘুমায়নি। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে সারা রাত।
আর একদম সকালেই আমাদের আশ্চর্যান্বিত করে শ্বশুরমশাইয়ের আগমন। আর আসা মাত্রই বউ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
কেঁদে কেঁদে ফুলে যাওয়া চোখ দিয়ে তীব্র দৃষ্টি হেনে বউ বলল, “তুমি এটা করতে পারলে বাবা? এই বুড়ো বয়সে… ছি ছি ছি…”
শ্বশুরমশাই বললেন, “ও তুই জেনে গেছিস? আচ্ছা তাহলে শোন, সত্যি বলতে বড় একঘেয়ে লাগছিল সবকিছু। রোজ তোর মায়ের সঙ্গে খিটির-মিটির ঝগড়া-ঝাঁটি তাই…”
বউ গলা ফুল ভলিউম করে দিয়ে বলল, “সেইজন্য তুমি এটা করছ?”
আমি এবার বাপ-মেয়ের কথার মধ্যে এন্ট্রি নিয়ে গলা ঝেড়ে বললাম, “যাই হোক এটা আপনার উচিত হয়নি। কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। আমার আর আপনার মেয়ের মধ্যেও তো কত ইয়ে মানে মতবিরোধ মতানৈক্য হয়, সেইজন্য যদি আমি আপনার মতো ইয়ে করি তাহলে আপনার ভাল লাগবে?”
শ্বশুরমশাই আমায় চমকে দিয়ে প্রশান্ত গলায় বললেন, “হ্যাঁ তুমি যদি করতে চাও করবে! আমিই ব্যবস্থা করে দেব।”
বউয়ের মুখ দেখে মনে হল, এক্ষুনি প্রলয় শুরু হবে। বলল, “তুমি? তুমি ব্যবস্থা করে দেবে? বাবা হয়ে এটা বলতে পারলে? তুমি কি চাইছ আমি সুইসাইড করি? ওগো শুনছ, দড়ি বা ঘুমের ওষুধ যা হোক কিছু দাও আমায়!”
সর্বনাশ! এতো দেখছি খুব খারাপ দিকে যাচ্ছে ব্যাপারটা!
শ্বশুরমশাই অবাক হলেন এতক্ষণে। বললেন, “এইজন্য সুইসাইড করবি তুই?”
বউ বলল, “তাহলে কী তুমি মনে করছ আমার বর আবার বিয়ে করতে যাবে আর আমি তার ধুতির কোঁচা ধরে পেছন পেছন যাব?”
শ্বশুরমশাই বিস্ফারিত চোখে বললেন, “বিয়ে? কী বলছিস তুই? বিয়ের কথা আসছে কোথা থেকে? আমি তো নাটকের কথা বলছি। আমার এক পরিচিত, একটা নাট্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। সেই বলল, দাদা নাটক করবেন? এক বৃদ্ধর রোল আছে। তো একঘেয়েমি কাটাতে রাজি হয়ে গেলাম। রোজ সন্ধেবেলায় রিহার্সাল হত। কাল নাটকটা ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। তোদের সারপ্রাইজ দেব বলে আগে থেকে কিচ্ছু বলিনি।”
বউয়ের চোখও বৃহদাকার ধারণ করল, বলল, “নাটক? তুমি নাটকের রিহার্সালে যেতে!”
সংসারে শান্তি ল্যান্ড করেছে। কচুরি খাওয়া চলছে। কচুরি বউই বানিয়েছে।
খেতে খেতে বউ বলল, “বাবা, নাটকে তোমার বিয়ে হবে?”
শ্বশুরমশাই মিটিমিটি হেসে বললেন, “হ্যাঁ হবে। সেই নিয়েই মজার নাটক।”
বউ আমার দিকে চেয়ে বলল, “দেখলে তো, ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়? নাটকে হলেও বাবার বিয়ে তো হচ্ছে। তুমি তো মানতেই চাও না।”
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, “ভেবেছিলাম শ্বশুরমশাইয়ের বিয়েতে কবজি ডুবিয়ে খাব… সেটাই হল না…”
বউ কটমট করে আমার দিকে তাকাল, শ্বশুরমশাই খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠলেন।
Article Comments